রংপুরে গত ছয় মাসে গো-খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। আনুষঙ্গিক পশুখাদ্য কিনতে না পেরে অনেকেই গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। লোকসানের আশঙ্কা থাকলেও আসন্ন কোরবানি ঈদে দাম পাওয়ার আশায় কেউ কেউ খামার টিকিয়ে রেখেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে গরু লালন পালন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ছয় মাস আগে গমের মোটা ভুসি প্রতি কেজি ৩১-৩২ টাকা ও চিকন ভুসি ৩২-৩৩ টাকায় বিক্রি হলেও এখন মোটা ভুসি ৫৫-৬০ ও চিকন ভুসি ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৫০ কেজি ওজনের সয়াবিন মিলের বস্তা ১৭৫০-১৮০০ টাকার জায়গায় এখন ৩১৫০-৩২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ভুট্টা পাউডার, চালের খুদ, খৈল ও চিটাগুড়েরও দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
বাজারে ২০-২২ টাকার ভুট্টা পাউডার এখন ৩৮-৪০ টাকা, ২০-২২ টাকার চালের খুদ ৩৩-৩৪, মাসকলাইয়ের ভুসি ২৮-২৯ থেকে বেড়ে ৪২-৪৩, ২৫-৩০ টাকা কেজির খৈল ৪৫-৫০ এবং ২৫ কেজি বস্তার মিক্সড ফিড ৭৮০ টাকা থেকে দাম বেড়ে ৯৮০-৯৯০ টাকা হয়েছে।
ভালোমানের ফিডের দামও বস্তাপ্রতি ১ হাজার থেকে বেড়ে ১২০০-১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিটাগুড়ের দাম প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে বলে খামারিরা জানিয়েছেন।
রংপুর জেলা ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলায় ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার খামারি রয়েছেন। নগরীর বুড়িরহাট এলাকার খামারি আরিফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ৬-৭ মাস আগেও তার বাড়িতে চারটি ষাঁড় ও তিনটি গাভি ছিল। পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে দুটি ষাঁড় বিক্রি করেছেন। কোরবানি ঈদে গরু বিক্রির আশায় রয়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঈদের পর নতুন করে আর গরু কিনে খামারের চিন্তা করবেন না বলে জানান তিনি।
নগরীর নীলকণ্ঠ এলাকার খামারি রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশি জাতের গরু লালন-পালনে একটা সময় আমরা দুর্বা ঘাসের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। সময়ের বিবর্তনে সেই ঘাস দিয়ে এখন আর হয় না। বাইরে থেকে খাবার সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু যেভাবে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে তাতে গরু পালন করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
রংপুর জেলা ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন। আগে তার খামারে দেশি ও সংকর জাতের অধর্শত গরু থাকলেও গত ছয় মাসের ব্যবধানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, যে হারে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে গরু পালন করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন খামারে ২৩০ লিটার দুধ উৎপন্ন হলেও গত দুই মাসে তা কমে ১২০-১২৫ লিটারে দাঁড়িয়েছে। পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেশি হওয়ায় গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় দুধের দাম বাড়ানো ও সরকারি উদ্যোগে খামারিদের রেশনিং পদ্ধতিতে পশুখাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা না গেলে কোরবানি ঈদের পর অনেকেই গরুর খামার বন্ধ করতে বাধ্য হবেন বলে জানান লতিফুর রহমান।
কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের খামারি মিজানুর রহমান বলেন, বাজারে পশুখাদ্যের দাম তো বেশিই। পাশাপাশি খড় বা ঘাসের দামও বেশি।
তিনি বলেন, ‘গরুর প্রধান খাদ্য ধানের খড়। চার মাস আগে এক হাজার মুঠার (আঁটি) দাম ছিল ৪ হাজার টাকা। এখন তা কিনতে হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এতে অনেকে গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমারও গরুর খামার তুলে ফেলতে হবে। খামারিদের কথা চিন্তা করে সরকারকে গো-খাদ্যের ওপর নজর বাড়ানো দরকার।’
রংপুর সিটি বাজারের গো-খাদ্য বিক্রেতা রাজু আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, প্রতিটি খাদ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ছয় মাস আগেও তার দোকানে যে হারে খাবার বিক্রি হতো এখন তা হয় না। মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় তার দোকানে বিক্রিও কমে গেছে।
গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমিয়ে ঘাস উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল হক।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, শুধু দুধ বিক্রি নয়, দুধ থেকে উৎপন্ন হয় এমন খাদ্য যেমন- ঘি, দই, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে পারলে খামারিরা তাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন
সুত্রঃ-জাগো নিউজ