নিউজ ডেস্কঃ
রংপুরের সুমিষ্ট, বিষমুক্ত ও জনপ্রিয় হাঁড়িভাঙা আম বাজারে উঠেছে। বিরূপ আবহাওয়া, ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে এ বছর আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতেই এই আমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তবুও থেমে নেই ক্রেতাদের আম কেনা।
প্রতি বছর জুনের তৃতীয় সপ্তাহে গাছ থেকে আঁশহীন এই আম পাড়া হয়। করোনা মহারীর কারণে এবারো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। বাগান থেকে সরবরাহ করে রংপুরের হাটবাজারে পাইকারি ও খুচরা দরে বিক্রি হচ্ছে হাঁড়িভাঙা এই আম। হাঁড়িভাঙা আমের সর্বাধিক উৎপাদনখ্যাত এলাকা রংপুরের পদাগঞ্জের বিভিন্ন বাগানে সরেজমিনে গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাত করতে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
স্থানীয় আম চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই বেশি দাম পাওয়ার আশায় বাগান থেকে অনেকেই আম বাজারে নিয়ে আসছেন। তাছাড়া জেলার বাইরে থেকে আসা পাইকাররাও আগাম আম নিয়ে লাভের আশায় ছুটছেন নিজ জেলাগুলিতে।
সরেজমিনে জেলার সবচেয়ে বড় আমের বাজার পদাগঞ্জহাটে সকাল ৭টা থেকে মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা হাঁড়িভাঙা আম নিয়ে আসেন। সেখানে পাইকাররা আমের ধরন ও সাইজ দেখে চাষিদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছেন।
কয়েকজন আম বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় আমের উৎপাদন বেড়েছে। তবে বিরূপ আবহাওয়া আর ঝড়-বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু বাগানে আমের মধ্যে পচনও ধরেছে। এ কারণে অনেকেই আগাম আম পাড়া শুরু করেছে। সেই আমগুলো এখন হাটবাজারে পাইকাররা কিনে নিচ্ছেন।
এখন বাজারে প্রতি মণহাঁড়িভাঙা আম ১ হাজার ৪শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এই দাম আমের পরিপক্বতাসহ সাইজ ও ধরনের উপর নির্ভর করছে। পদাগঞ্জ হাটের রাস্তার দুই পাশে আম ভর্তি ঝুড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তাদের কাছ থেকে পাইকাররা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতারাও আম কিনছেন। অনেকেই রংপুরের বাইরে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে আম পাঠাতে হাটের মধ্যে থাকা কুরিয়ার সার্ভিসের পরিবহন সেবা নিচ্ছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারদের উপস্থিতির উপর আমের বাজার দর উঠা-নামা করছে। প্রতি মণ আম ১ হাজার ৪শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার এর চেয়ে মণ প্রতি ১শ থেকে ২শ টাকা কম। তবে খুচরা কিনতে গেলে কেজি প্রতি হাঁড়িভাঙা আম ৫০ থেকে ৭০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর রংপুর থেকে ঢাকায় আম পাঠালে কেজি প্রতি কুরিয়ার সার্ভিসের পরিবহন সেবায় খরচ পড়ছে ১২ টাকা, ঢাকার বাইরে হলে তা ১৫ টাকা।
রংপুরের দর্শনা থেকে আম কিনতে আসা শামসুল নামে এক ক্রেতা বলেন, কখন হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসবে সে অপেক্ষায় ছিলাম। আজ আম কিনতে পেরে ভালো লাগছে। তবে বিক্রেতারা দাম বেশি নিচ্ছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সরোয়ারুল হক জানান, এ বছর রংপুর জেলায় ৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আমের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে এক হাজার ৭৫০ হেক্টর। আশা করা হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন হবে। এখান থেকে প্রায় ১১৫ কোটি টাকার বিপণন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বিপণনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সুত্রঃ সময়ের কণ্ঠস্বর