লাল টমেটোর লাভে রঙিন হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন জামালপুরের চরাঞ্চলের টমেটো চাষিরা। এ বছর শুরু থেকেই টমেটোর ফলন বেশি দামও দ্বিগুণ পেয়ে খুশি কৃষকরা।
প্রথম দিকে প্রতিমণ টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। বর্তমান বাজার ৮০০ থেকে হাজার টাকা। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। কৃষি অফিস বলছে, খরচ কম লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে টমেটো চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জামালপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলের শরিফপুর, রানাগাছা, লক্ষীরচর, তুলশীচর, বারুয়ামারি, টিকরাকান্দি, নরুন্দি, নান্দিনা, ইটাইল ইউনিয়ন ছাড়াও সদরের আরো কয়েকটি এলাকায় টমেটোর চাষ হয়ে আসছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর টমেটোর ফলন ভালো এবং দামও দ্বিগুণ।
কৃষকরা জানান, গত বছর টমেটো চাষ করে তারা লোকসানে পড়েছিলেন। এ বছর তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন। প্রতি বিঘায় টমেটো আবাদে তাদের খরচ হয়েছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সেখানে বিক্রি করেছেন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। যা লাভের অংশ দ্বিগুণ। এ বছর চরাঞ্চলে বারী, বিউটিফুল, বিউটিফুল-২, বিউটিফুল-৩, বিফুলপ্লাস জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে।
এছাড়াও চর এলাকায় সাধারণত উদয়ন, উন্নয়ন, দিগন্ত, রুপসী, বিউটিফুল, লাভলী, ব্র্যাকের আবিস্কৃত ১৭৩৬, সফল, কোহিনুর মঙ্গলসুপার ও মঙ্গলরাজা। এর মধ্যে বিউটিফুল, দিগন্ত, রুপসী জাতের টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে বাজারের চাহিদা বেশি।
এদিকে টমেটোর মৌসুম শুরু হওয়ায় রাজধানী ছাড়াও কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা ট্রাক, পিকআপভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়িতে করে মণ মণ টমেটো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শুরুতেই প্রতিমণ টমেটো পাইকারি ১৮শ টাকা থেকে ১৭শ টাকায় বিক্রি হলেও আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম আস্তে আস্তে কমেছে।
টমেটোর প্রধান বিক্রয় কেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী নান্দিনা বাজার ছাড়াও শরিফপুর বাজার, মহেশপুর কালিবাড়ী, বারুয়ামারি, গজারিয়া মোড়, নরুন্দি বাজার, তারাগঞ্জ বাজারে টমেটোর হাট বসে।
চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করতে সর্বমোট খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ফলন ও দাম ভালো থাকলে খরচ উঠিয়ে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। যা অন্য কোনো ফসলে পাওয়া অসম্ভব।
টমেটো চাষি মোহাম্মদ করিম জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন ভালো। প্রতি জোয়ারে ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিবিঘা জমিতে খরচ ৫০-৬০ হাজার টাকা। শুরুতেই ১৭শ – ১৮ শ টাকায় টমেটো বিক্রি হয়েছে। গত বছরের দ্বিগুণ দাম পেয়েছি।
জামালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার দিলরুবা ইয়াছমিন বলেন, টমেটো আবাদ করে কৃষকরা খুবই খুশি। কারণ এ বছর ফলন বেশি এবং বাজারে দামও বেশি। তারা প্রতি হেক্টরে ৮০ থেকে ৮৫ মেট্রিকটন ফলন পেয়েছে। টমেটো আবাদে অল্প ব্যয় লাভ বেশি এই জন্য কৃষকদের মধ্যে টমেটো চাষে দিন দিন আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, চলতি বছর জামালপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলে ১১ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। গত বছর দাম গড়ে গেলেও এ বছর তা মনে হচ্ছে না। ফলে রঙিন টমেটোর লাভে কৃষকের মুখেও রঙিন হাসি ফুটেছে।
সুত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ