গৌতম চন্দ্র বর্মন,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নে এক জমিতে ভুট্টাও ডাটা ঝিঙ্গা দুই ফসল ফলিয়ে সফলতা এনেছে দুইশতাধিক কৃষক।এতে ভুট্টার ডাটাকে ঝিঙ্গা গাছের খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করে এক অভিনব পন্থায় স্বল্প খরচে এক জমিতেই দুই ফসলের আবাদ করে অধিক আয় করছেন ।
কৃষকদের হিসেব অনুযায়ী,বর্তমানে কিছুটা উৎপাদন কমে গেলেও কিছুদিন পূর্বে ওই কৃষকরা এক বিঘা জমি থেকে গড়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড়মণ করে ঝিঙ্গা তুলে বাজারজাত করেছেন। এতে ভুট্টা ফসল উঠার পর পরেই ভুট্টার পরিত্যক্ত ডাটাকে খুটি হিসাবে ব্যবহার করে ঝিঙ্গা থেকে তারা অতিরিক্ত আয় করেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, লেহেম্বা ইউনিয়নের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের লেহেম্বা ব্লকের বিরাশি গ্রামের আক্তার সামসুলসহ ঝিঙ্গা চাষাবাদ কারী কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, গমের পরে ভুট্টা লাগিয়ে ভুট্টা পেকে গেলে তা তুলে নিয়ে জমি ফেলে রাখতেন আলু রোপনের অপেক্ষায়। তখন স্বল্প সময়ের জন্য কোন ফসল হতো না বলেই ফেলে রাখা হতো।
কিন্তু স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে বর্তমানে আর জমি ফেলে রাখতে হচ্ছে না। কারণ ভুট্টার বীজ রোপনের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ভুট্টার গাছ বড় হয়ে পড়ে। সে-সময় ভুট্টার গাছের পাশে ঝিঙ্গার বীজ রোপন করে দিলে একদিকে ভুট্টার মোচাও চলে আসে এবং ভুট্টা পেকেও যায়। অপরদিকে ঝিঙ্গার গাছও বড় হয়ে ফলন দিতে শুরু করে। সে-সময় শুধু ভুট্টার মোচা গাছ থেকে ভেঙ্গে নিয়ে গাছটিকে ঝিঙ্গার খুটি হিসাবে রেখে দিতে হয়। ভুট্টা ভেঙ্গে নিয়ে বাজারজাত করা হয় অন্যদিকে আবার ঝিঙ্গা একই জমি থেকে তুলে ভুট্টার সাথেও বাজারে বিক্রি করা যায়। অথ্যাৎ এক জমি থেকে এক সাথে দুটি ফলন উৎপাদন করে বাজারজাত করে এখানকার কৃষকেরা। তারা বিগত তিন বছর ধরে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে চাষাবাদ করে আসছেন।
কৃষকেরা জানান, ভুট্টা ও ঝিঙ্গা এক সাথে আবাদ করার কারণে এক খরচেই দুটি ফসল আবাদ হচ্ছে। ঝিঙ্গার জন্য আলাদা কোন খরচ বহন করতে হচ্ছে না। তাই তারা মনে করে এটি একটি লাভজনক চাষাবাদ। এছাড়াও এটি একটি বিষমুক্ত সবজি।
কৃষক আক্তার জানান, ভুট্টা তুলে নেওয়ার পরে এবং আলু রোপনের জমি প্রস্তুত করার আগ মুর্হুত পর্যন্ত জমি থেকে ঝিঙ্গা তুলে বাজারে বিক্রি করা যায়। সামসুল জানান, আমরা কৃষি অফিসের এমন উন্নত প্রযুক্তি অবলম্বন করে। আমাদের এলাকায় সবজির চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে আশ পাশের গ্রামসহ উপজেলা জেলা শহরের পাইকারদের কাছে ১০ টাকা কেজি ধরে পাইকারীভাবে ঝিঙ্গা বিক্রি করছি। এতে একদিকে যেমন আমাদের সবজির চাহিদা মিটছে অন্যদিকে আমরাও এক জমি থেকে দুটি ফলন পেয়ে কৃষি আবাদ করে আয় ইনকাম অব্যাহত রাখতে পারছি। পরিবার পরিজন নিয়ে কৃষি আবাদ করেই সুন্দর জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি।
এদিকে এ পদ্ধতিকে সমস্ত উপজেলা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারী কর্মকর্তা মাধ্যমিক শিক্ষক প্রভাষক সাংবাদিক এনজিও কর্মি ও জনপ্রতিনিধির সম্বন্বয়ে ২৫ জনের একটি দলকে নিয়ে। বিরাশি গ্রামে ঝিঙ্গা চাষের অভিনব পন্থার সরেজমিন পরিদর্শন করে আবাদের পদ্ধতি দেখানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানিয়েছেন। ভুট্টা খেতে ঝিঙ্গা চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে লেহেম্বা বকের বিরাশিসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম পাড়ার প্রায় ২১৫ জন কৃষক প্রায় ৫০ হেক্টর জমি চাষাবাদ করছেন। তিনি জানান ইতিপূর্বে ঐ এলাকার কৃষকেরা ভুট্টা চাষ করে জমি ফেলে রাখতো আলু রোপণের অপেক্ষায়। বর্তমানে আমাদের পরামর্শে ভুট্টার সাথে ঝিঙ্গা সবজি চাষ করছে। এতে তারা আলু রোপণের আগ মুর্হুত পযর্ন্ত ঝিঙ্গা ফলন পেয়ে থাকে। কৃষি অফিসার আরো জানান, ঐ এলাকার ৫০ হেক্টর জমি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ মণ ঝিঙ্গা তুলে বাজারজাত করে কৃষকেরা। এ ঝিঙ্গা সবজি হিসাবে আমাদের সমগ্রহ উপজেলার বাজারঘাটসহ জেলা শহরেও রপ্তানি হয় বলে আমরা ধারণা করছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না এ পদ্ধতির চাষাবাদকে একটি মাইলফলক পদ্ধতি দাবী করে। সমগ্র দেশের কৃষকদের এমন পদ্ধতি অনুসরণ করে ভুট্টা ও ঝিঙ্গা চাষের আহবান জানান তিনি।