কৃষি এখন শুধু খরপোষের নয়, বর্তমানে কৃষি বাণিজ্যিক অবয়ব লাভ করেছে। দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনতে হবে। তাছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টেকসই কৃষি ও পুষ্টি উন্নয়নের দিকে জোর দিতে হবে। আর এজন্য শস্য বহুমুখীতা অর্জনে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে অল্প জমিতে অধিক লাভবান ফসল আবাদের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামের কৃষক মোঃ সেন্টু মিয়া।
০১ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করে যেখানে ৮-১০ হাজার টাকা লাভ হয়, সেখানে একই জমিতে লতিরাজ কচু চাষ করে ৪০-৫০ হাজার টাকা আবাদ করা সম্ভব।
তিনি এববছর উপজেলা কৃষি অফিস বাঘার সহযোগিতায় কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মত লতিরাজ কচু চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে লতি তুলতে শুরু করেছেন। লাগানোর মাত্র ০২ মাসের মধ্যেই লতি নামতে শুরু করেছে। প্রথমবার লতি তুলে তিনি নিজের আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করেছেন। তিনি আশা করছেন প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা লতি, শলা (কন্দ), ডাগর (ডগা) ও ফুল বিক্রি করতে পারবেন। উপজেলা কৃষি অফিসের এক ট্রেনিং থেকে তিনি এই লতিকচু সম্পর্কে জানতে পারেন। পরে আগ্রহ প্রকাশ করলে উপজেলা কৃষি অফিসার তাকে ২৫ শতকের একটি প্রদর্শনী দেন। বাকি প্রায় আরো ১৫ শতকে নিজ উদ্যোগে লতিকচু চাষ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বাঘা উপজেলা মূলত আমের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এ উপজেলায় শুধু আম নয়, অন্যান্য আরো ফসল হয়। কৃষিতে বৈচিত্রতা আনতে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতার লক্ষ্যেই উচ্চফলনশীল লাভজনক ফসল লতিরাজ কচুর সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের সম্মানিত প্রকল্প পরিচালক জনাব মোঃ মোখলেসুর রহমান স্যারকে ধন্যবাদ জানান। প্রকল্প পরিচালক বাঘা উপজেলার জন্য নতুন নতুন ফসল সম্প্রসারণে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, লতিরাজ মূলত বারি পানিকচু-১। উচ্চফলনশীল এ কচু অন্যান্য সকল পানিকচুর চেয়ে বেশি ফলন দেয়। এর লতি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং গোলা চুলকায় না, তাই এই জাতের লতি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে উৎপাদন বাড়াতে কচুর প্রথম লতি যখন ১ বিঘত পরিমাণ হবে, তখন কেটে দিতে হবে, এতে করে পাশ্ব কুশি অর্থাৎ লতির সংখ্যা বাড়বে, ফলে উৎপাদন ২-৩ গুণ বেড়ে যায়।
তিনি আরো জানান, বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ছাড়াও বাউশা, পাকুরিয়া, বাজুবাঘা ইউনিয়নে প্রায় ১০ টির মত প্রদর্শনী বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ বছর প্রায় ০৫ হেক্টর জমিতে লতিকচু চাষ হচ্ছে।
লতিরাজ কচু চাষে বালাইনাশকের ব্যবহার খুবই কম হয়, তাই এ কচু নিরাপদ। স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে লতিরাজ কচুর আবাদ আগামীতে আরো সম্প্রসারণের কার্যকর উদ্যোগ হাতে নেওয়া হবে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।