লিচুর মৌসুম শুরু, উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কালিচুর মৌসুম শুরু, উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশের বাজারে আসতে শুরু করেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মৌসুমি ফল লিচু। তবে লিচু চাষিরা বলছেন এবার উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে কম হবে।

উত্তরাঞ্চলীয় রাজশাহী, যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, ময়মনসিংহ, ঢাকার সোনারগাঁ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় লিচুর চাষ হলে দিনাজপুরে উৎপাদিত লিচুকেই দেশের সেরা লিচু বলে দাবি করেন সেখানকার চাষিরা।

বাংলাদেশের জাতীয় তথ্য বাতায়নেও দিনাজপুরের লিচুকে সেরা লিচু হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও গবেষকরা বলছেন লিচুর যে জাতটি স্বাদ ও পুরুত্বের জন্য সেরা সেই জাতটির নাম হলো চায়না-৩।

দিনাজপুরসহ আরো কয়েকটি জেলায় এটি চাষ হয়। তবে জাত বা জনপ্রিয়তার বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দিতে রাজী নন চাষিদের অনেকে কারণ এবার তারা লিচু উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

উৎপাদন কেন কম হবে
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে দেশে প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ টনের মতো লিচু উৎপাদন হয়। তবে এটি এ বছর কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মৌসুমি ফলের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদি মাসুদ।

আবহাওয়াসহ কিছু কারণে এবার লিচুর ফলন অন্তত ত্রিশ হাজার টন কম হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে দিনাজপুরের লিচু চাষি জিয়াউর রহমান বলছেন, কিছু দিন আগে হঠাৎ করে কয়েক দিন কুয়াশা পড়েছিল এবং বৃষ্টির আগেও কুয়াশা পড়েছে যা লিচুর জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।

এবার এমনিতেই ফলন ভালো হয়নি। এখন বৃষ্টি হলে আবার পোকা লাগার আশঙ্কা আছে। সব মিলিয়ে ফলন কিছুটা কম পাচ্ছি আমরা, বলছিলেন তিনি।

বাজারে এসেছে আগাম জাতের লিচু কিন্তু খাওয়া কতটা নিরাপদ
ড. মেহেদি মাসুদ বলছেন লিচুর মৌসুম সাধারণত ধরা হয় এক মাস। মধ্য মে থেকে মধ্য জুন সময়ে বাহারি লিচুতে ভরে যায় বাংলাদেশের বাজারগুলো। কিন্তু এবার কিছু আগাম জাতের লিচু এসেছে যেগুলো অপরিপক্ব অবস্থায় গাছ থেকে তোলা হয়েছে।

মাসুদ বলেন, সাধারণ মৌসুমের শুরুতে সাতক্ষীরার লিচু বাজারে আসে। এরপর আসে পটিয়ার লিচু এবং এরপর মঙ্গলবাড়ী ও সোনারগাঁওয়ের লিচু। এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন জাতের লিচুর পাকতে শুরু করে এবং বাজারে আসা শুরু হয়।

চাষি জিয়াউর রহমান বলছেন, দিনাজপুরের কোথাও এখনো লিচু পাড়া শুরু হয়নি। এটি শুরু হবে আরো অন্তত এক সপ্তাহ পর।

রহমান বলছেন, তারা সাধারণত বেদানা, বোম্বাই, মাদ্রাজী ও চায়না-৩ জাতের লিচু চাষ করে থাকেন। সরকারি হিসেবে লিচুর জন্যই সুপরিচিত এই দিনাজপুরে প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে লিচুর চাষ হয় এবং এ জমিতে গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি। সাধারণত প্রতিটি গাছে এক মৌসুমে চার হাজারের মতো লিচু পাওয়া যায়। আর জেলায় উৎপাদিত লিচুর ৮০ ভাগই ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় চলে যায়।

কোন জাতের লিচু খেতে কেমন, দাম কেমন
ঢাকার গৃহিণী আফরিনা হোসেন নিজে ও তার সন্তানদেরও লিচু খুব প্রিয়। তার অভিযোগ এখন আর আগের মতো সুস্বাদু লিচু পাওয়া যায় না।

তার মতে স্বাদের দিক থেকে সেরা চায়না-৩ জাতের লিচু এবং এটির ভক্ষণযোগ্য অংশ অনেক বেশি হয়। চীন থেকে আসা এ জাতটি ক্রেতাদের কাছেও অনেক সমাদৃত। দিনাজপুর ও মাগুরাসহ কিছু জায়গায় এটির চাষ হয়।

এর শ্বাস বা খাওয়ার অংশটা বেশ পুরু হয় আর খেতে খুবই সুস্বাদু। বাজার সাধারণত প্রতি পিস চায়না-৩ লিচু ৬/৭ টাকা বা তারও বেশি দামেও বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ধরনের আরেকটি দামি লিচুর জাত বেদানা।

তবে বাজারে এটি কম পাওয়া যায় কারণ সরাসরি দেশের বাইরে যায় এ লিচুটি যার বাজার দর পিসপ্রতি ৮-১০ টাকা হয়ে থাকে।

আবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্ভাবিত বারি-৩ জাতের লিচুতে গোলাপের ঘ্রাণ থাকে বলে দাবি অনেকের। খুবই সুস্বাদু এ জাতটি বাজারে আসে জুন মাসে।

এছাড়া যশোর, মেহেরপুর ও রাজশাহীসহ কয়েকটি জেলায় বোম্বাই লিচুর চাষ হয়। চাষিরা বলছেন, এই লিচু সংরক্ষণ করা কিছুটা সহজ।

‘নতুন দু একটি জাত দিয়ে লিচুর মৌসুম এখন জুলাই পর্যন্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে। সে কারণে জুলাইয়ের শুরুতেও এখন একটি জাতের লিচু আসছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আরো কিছু জাত আনা যায় যার মাধ্যমে বাজারে বেশি সময় লিচু পাওয়া সম্ভব হবে,’ বলছিলেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *