শিল্পগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে পোলাওয়ের চালশিল্পগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে পোলাওয়ের চাল

কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর কবজায় পোলাওয়ের চালের বাজার। দুই মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পোলাওয়ের চালের কোনো সংকট নেই। কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী চাল কেনায় দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি পোলাওয়ের চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। দুই মাস আগেও প্রতি কেজি পোলাওয়ের চালের দাম ছিল ৮৪-৮৫ টাকা। বর্তমানে তা ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর কৃষকেরা পোলাওয়ের চালের ভালো দাম পাননি। এ কারণে দেশে এ চালের আবাদ অনেকটা কমে গেছে। আবাদ কমলেও চালের কোনো সংকট নেই। চড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারে অনেকের পোলাও খাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এরপরও দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বাজারের মেসার্স নিউ মুক্তা রাইস এজেন্সির মালিক দ্বীন মোহাম্মদ স্বপন জানান, আকিজ, এসিআই, সিটি, বসুন্ধরা, প্রাণ, টিকে, রূপচাঁদাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ পোলাওয়ের চাল সংগ্রহ করেছে। এ কারণে দাম অনেকটা বেড়েছে।

রাজধানীর পশ্চিম রামপুরা এলাকার মেসার্স সূচনা রাইস এজেন্সির মোজাম্মেল হোসেন জানান, প্রতি কেজি খোলা পোলাওয়ের চাল আগে ৯০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন ১১০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর প্যাকেটজাত পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। দুয়েকটি কোম্পানি বলেছে, প্রতি কেজি পোলাওয়ের চালের প্যাকেট ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসিআই, প্রাণ, চিনিগুঁড়া, ফ্রেশ, রূপচাঁদা, পুষ্টি পোলাও চাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর চাষী ও তীর ব্র্যান্ডের চাল ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ৫০ বা ২৫ কেজির বস্তার পোলাওয়ের চালের কেজি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকা।

পুরান ঢাকার পোলাওয়ের চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পাইকারিতে ৮ টাকা, খুচরায় ১০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চালে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা জানান, এ চালের ব্যবহার বেড়েছে আর উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।

পুরান ঢাকার পোলাওয়ের চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁদের বাজারে গত এক থেকে দেড় মাস আগেও প্রতি কেজি পোলাওয়ের চালের দাম ছিল ৮২-৮৩ টাকা। বর্তমানে তা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্যাকেটজাত পোলাওয়ের চালের কেজি ছিল ১১০-১১৫ টাকা। বর্তমানে তা ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চিনিগুঁড়া, কালিজিরা, কাটারিভোগ, বাসমতী ধান থেকে সুগন্ধি চাল তৈরি হয়। আমন মৌসুমে সুগন্ধি ধানের চাষ হয়। এ মৌসুমে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়। পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি, জর্দা, ভুনা খিচুড়ি, ফিরনি, পায়েসসহ আরও নানা পদের সুস্বাদু ও দামি খাবার তৈরিতে এ চাল বেশি ব্যবহার হয়। বিয়ে, বৌভাত, বনভোজন, পূজা-পার্বণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপসহ সব ধরনের অনুষ্ঠানে সুগন্ধি চালের ব্যবহার হয়। অনেক সচ্ছল পরিবারে, বনেদি ঘরে সাধারণ চালের পরিবর্তে সুগন্ধি (কাটারিভোগ, বাংলামতি) সিদ্ধ চালের ভাত খাওয়ার রেওয়াজ দেখা যায়। চাইনিজ, ইতালিয়ান, ইন্ডিয়ান হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পাঁচ তারকা হোটেল, মোটেল, পর্যটনকেন্দ্রে প্রধানত সুগন্ধি চালের ভাত, পোলাও পরিবেশনে সুগন্ধি চাল ব্যবহার করা হয়।

পোলাওয়ের চালের অস্বাভাবিক দামের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, পোলাওয়ের চালের দাম ১১০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কেন ১৪০ টাকা করা হয়েছে তা ওই বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানানো যাবে।

সুত্রঃ আজকের পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *