নিউজ ডেস্কঃ
পাঁচ বছর আগেও খুব গরিব ছিলেন তোয়ো ম্রো। তবে তার দেড় একর জমি ছিল। আর সে জমিতেই চাষ শুরু করেন ‘ড্রাগন’ ফল। এতে অল্প দিনেই সফল চাষি বনে গেছেন তিনি। এ সাফল্য চলতি বছরেও তাকে দিয়েছে প্রেরণা। করোনার কারণে শুরুতে কিছুটা দাম কমে গেলেও দ্বিতীয় দফার উৎপাদনেই আবার ফিরে পেয়েছেন দাম।
তোয়ো ম্রোর বাড়ি বান্দরবান শহরের চিম্বুক এলাকার বসন্ত পাড়ায়। বান্দরবান শহর থেকে পাহাড়ি পথে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক এলাকাটি।
ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী ম্রো সম্প্রদায়ের সদস্য তোয়ো ম্রো বলেন, ২০১৫ সালে ড্রাগন চাষ শুরু করা হয়। তখন দারিদ্র্য ঘোচাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হার্টিকালচার বিভাগের পরামর্শে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে কঠোর পরিশ্রম শুরু করি। এ কাজে স্ত্রী ও সন্তানরা সহায়তা করেন।
তিনি বলেন, প্রথমে ভয়ে ভয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন চাষ করলেও ২০১৯ সালে এ ভয় দূর হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় পুরো জমিতে খুব ভালো করে চাষ করা হয়। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। গত বছর নিজ বাগান থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করা হয়েছে। এ বছরও অনেক ভালো বিক্রি হবে।
তোয়ো ম্রো বলেন, করোনার কারণে এ বছর সময়মতো বাগানের ড্রাগন ফল বাজারজাত করতে পারিনি। আর তখন লকডাউন ও যান চলাচল না থাকায় বাজার ছিল মন্দা। এ কারণে প্রথম ধাপে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে ড্রাগন। গত বছর ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে ফল বিক্রি করেছিলাম। তবে এ বছর লকডাউনের সময় প্রথম ধাপে বিক্রি করেছি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। এখন লকডাউন না থাকায় আবার আগের অবস্থা ফিরে এসেছে। ফলের দাম বেড়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আগের বছরের চেয়েও বেশি দামে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি করছি।
এ বিষয়ে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. একেএম নাজমুল হক বলেন, ড্রাগন একটি বিদেশি ফল। বান্দরবানে এর ফলনের আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। গত বছরে পুরো বান্দরবান জেলায় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে ড্রাগনের আবাদ হয়েছে। এসব জমি থেকে আমরা ৫৮০ মেট্রিক টন ড্রাগন ফল উৎপাদন করতে পেরেছি। এ বছর এর উৎপাদন ৬০০ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। বান্দরবানের আবহাওয়া ও মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। আর পর্যটন এলাকা হওয়ায় খুব সহজেই ড্রাগন ফলের চাহিদা বেড়েছে।
তোয়ো ম্রোকে কৃতিত্ব দিয়ে ড. নাজমুল বলেন, সদরের ১৪ কিলোমিটার দূরে বসন্ত পাড়ায় তোয়ো ম্রো নামের এ কৃষক প্রশিক্ষণ নিয়ে সর্বপ্রথম ড্রাগন চাষ শুরু করেন। তার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। এখন তিনি সফল ড্রাগন চাষি। তোয়ো ম্রোর সাফল্য দেখে এখন অনেকেই ড্রাগন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সূত্রঃডেইলি বাংলাদেশ