শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অমান্য করে উপজেলার পাঠাকাটা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আবু শামীম মমতাজ (শামীম) এর বিরুদ্ধে গোদাডাঙ্গা বিল থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হতাশ ক্ষুদ্র-মাঝারি কৃষক ও মৎস্যজীবীরা।পাঠাকাটা ইউনিয়নের কৈয়াকুড়ি কান্দাপাড়া এলাকার অর্ধশত ক্ষুদ্র-মাজারি কৃষক ও বিলের ইজারাদার স্থানীয় এমপি সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেরপুর জেলা প্রশাসক, শেরপুর পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, জেলা ও উপজেলা প্রেস ক্লাব বরাবরে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন।
অন্তত ৩৫ জনের স্বাক্ষর ও টিপ সহিসহ ক্ষুদ্র-মাঝারি কৃষকের দায়ের করা লিখিত অভিযোগে তারা জানান, তাদের খুবই অল্প পরিমাণ কৃষি জমি আছে, যাতে কোন রকম পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করতে পারছেন। তাদের কোন একজনের সামান্য জমি বাড়তি টাকার লোভ দেখিয়ে মৌখিক ভাবে কিনে নিয়ে সেখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সামান্য কৃষি জমিটুকু ড্রেজারের গর্তে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে এলাকার অর্ধশত ক্ষুদ্র কৃষক ভূমিহীন হয়ে যাবে, এমনকি অনেক কৃষক খুব কম দামে তাদের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। তাতে করে অনেকে কৃষক থেকে শ্রমিকে পরিণত হবেন। ওই অভিযোগে তারা আরও বলেন, এরই মধ্যে শামীম একই গ্রামের একটি জমিতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন কারায় অনেকে ভূমিহীন হয়েছেন। তাই ভূমিহীন হওয়া ওইসকল কৃষকরাও এই অভিযোগের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন।
গোদাডাঙ্গা বিলের ইজারাদারের দায়ের করা অভিযোগের তথ্যে জানা গেছে, গোদাডাঙ্গা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা সরকারি সকল বিধি বিধান মেনে ১৪২৭ বাংলা সাল থেকে ১৪২১ বাংলা সাল পর্যন্ত ৩ বছরের জন্য মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট থেকে ইজারা নিয়ে ১৫ লাখ টাকার মাছের পোনাসহ ৫ লাখ টাকার মাছ ধরার সরঞ্জাম ক্রয় করেছেন। ফলে ইজারাসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকা গোদাডাঙ্গা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির থেকে ব্যয় হয়েছে। এমতাবস্থায় গোদাডাঙ্গা বিল ভাসা পানিতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করলে সকল মাছ ওই গর্তে চলে যাবে। এতে তাদের অপুরনীয় ক্ষতি হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। ফলে গোদাডাঙ্গা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অর্ধশতাধিক পরিবারের সদস্যরা পথে বসে যাবেন। এমন অভিযোগ পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি), ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার আহাম্মেদ পাঠাকাটা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আবু শামীম মমতাজ (শামীম) এর ড্রেজার মেশিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন।
অনেক এলাকাবসী তথা ক্ষুদ্র কৃষক জানান, সরকার যেখানে ভূমিহীন নামক কলঙ্গ থেকে দেশকে রক্ষা করতে খাসজমি ভূমিহীনদের নামে দিচ্ছেন। সেখানে ভূমি দস্যু আবু শামীম মমতাজ (শামীম) রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবারকে ভূমিহীন করেছে, যা সরকার বিরোধী কার্যকলাপ বলে অনেকে মন্তব্য করেন। প্রথমে রাজনৈতিক হয়রানির ভয়ে কেউ প্রতিবাদ না করায়, সে এখন গোদাডাঙ্গা বিলে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। এমতাবস্থায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে আরও অনেক পরিবার ভূমিহীন হবে বলে তারা জানান।
ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শামীম বলেন, আমি আমার নিজস্ব জমি থেকে বালু উত্তোলন করতে ড্রেজার মেশিন বসিয়েছি। এতে কারও কোন প্রকার ক্ষতি হবে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন নিজের জমিতে পুকুর দিতে চাইলে কারো বাধা দেওয়ার কিছু নেই। শামীমের এমন সব কথার উত্তরে ইজারাদার ও ক্ষুদ্র কৃষকার প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, তাহলে কি নিজের সন্তানকে নিজে খুন করা যাবে? নিজের সন্তান নিজের হাতে হত্যা করলে কি অপরাধ হবে না? নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেত গিয়ে অগণিত পরিবারকে ভূমিহীন করা ও খেটে খাওয়া মানুষের রুটি রোজগারে আঘাত হানা কি অন্যায় না? এমন আরও অনেক যৌক্তিক প্রশ্ন করেন তারা।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি), ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার আহাম্মেদ বলেন, ২০১০ সালের মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযয়ী বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদ-নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ১নং আইনে বলা আছে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় বালু উত্তোলন কার নিষেধ। সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক-মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে অন্তত এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। বালু বা মাটি বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোন নদীর তীর ভাঙ্গনের শিকার হইতে পারে এইরূপ ক্ষেত্রে বালু উত্তোলন নিষেধ। ড্রেজিংয়ের ফলে কোন স্থানে স্থাপিত গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, পয়:নিষ্কাশন লাইন বা অন্যকোন গুরুত্বপূর্ণ লাইন বা তদ্সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশংকা থাকিলে বালু উত্তোলন করা যাবে না। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর আওতাধীন উক্ত বোর্ড কর্তৃক চিহিৃত সেচ, পানি নিষ্কাশন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে নির্মিত অবকাঠামো সংলগ্ন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষেধ। চা বাগান, পাহাড় বা টিলার ক্ষতি হতে পারে এমন স্থান হতে বালু উত্তোলন নিষেধ। এমনকি নদীর ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ, মৎস্য, জলজ প্রাণি বা উদ্ভিদ বিনষ্ট হইলে বা হইবার আশংকা থাকিলে সেখান থেকে বালু উত্তোলন আইনগত ভাবে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে। উক্ত নিষেধাঙ্গা গুলোর মধ্যে গোদাডাঙ্গা বিলে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার সুযোগ নেই। তাই ভুক্তভোগীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনী ভাবে শামীমের ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন কাজ আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।