সবজির সঠিক দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকেরা

কুষ্টিয়ায় সবজি উৎপাদনে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। কুষ্টিয়ার সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। তবে সবজির খুচরা বাজারে বেশি হওয়ায় নাভিশ্বাস ফেলতে হচ্ছে ক্রেতাদের। পাইকারি বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে খুচরা বাজারে সবজির দামের পার্থক্য দেখা যায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। এতে উৎপাদিত সবজির সঠিক দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকেরাও।

কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকার মাঠের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কাছ থেকে সবজি কম দামে কিনে পাইকারি বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের মাথায় হাত বুলিয়ে লাভবান হচ্ছে ফড়িয়া ব্যাপারিরা। আর সাধারণ ক্রেতারা সবজি কিনতে গিয়ে দিশেহারা।

কুষ্টিয়ার উজানগ্রাম পাইকারি বাজারে বেগুন প্রকার ভেদে ৪০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে ১৫ টাকা কেজি , শসা ৪০ টাকা কেজি, করলা ৬০ টাকা কেজি, বরবটি ৫০ টাকা, ঝিঙ্গা ৩০ টাকা, ফুলকপি ৫০-৫৫ টাকা কেজি, বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব জায়গা থেকে শাক-সবজি আসে, সেখানে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কৃষকদের থেকে খুব অল্প টাকায় বিভিন্ন শাক-সবজি কিনে থাকেন। সেই কৃষিপণ্য কিনে নেয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাজারের ফড়িয়া এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিলেই অল্প পুঁজি দিয়ে কৃষকদের ঠকিয়ে বড় অঙ্কের লাভ করেন।

কুষ্টিয়ার বিভিন্ন খুচরা বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি, করলা ৮০ টাকা কেজি, বরবটি ৭০ টাকা কেজি, ঝিঙ্গা ৪০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৮০ টাকা কেজি, সীম ১২০ টাকা কেজি, বাধাকপি ৫০-৫৫ টাকা কেজি, মুলা ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উজানগ্রাম থেকে কুষ্টিয়া শহরের দূরত্ব মাত্র ৯ কিলোমিটার। আর এই ৯ কিলোমিটার দূরেই কেজি প্রতি বিভিন্ন ধরনের সবজির দামের পার্থক্য কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। কখনো আবার ঠিকমতো দামই পায় না চাষিরা।
তবে ক্রেতারা বলছেন, মাঠ থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সঠিকভাবে মনিটরিং না করার কারণেই বাজারের এই অস্থিরতা। বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন তারা।

বিত্তিপাড়া গ্রামের সবজী চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। এখনও গাছে অনেক শিম রয়েছে। আগাম হওয়াতে বেশ ভালো দাম পেয়েছি। মাঠ থেকেই ১০০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করছি।

উজানগ্রাম এলাকার কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, আমার দুই বিঘা জমিতে শিম, করলা, বরবটি, ঝিঙ্গা ও ফুলকপি চাষ করেছি। দামও বেশ ভালোই পাচ্ছি। তবে আমাদের স্থানীয় বাজারে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারদের কাছে অল্প দামে বিক্রি করা লাগে বলে আমি শহরে গিয়ে বিক্রি করেছি। গতকালও করলা ৬০ টাকা কেজি, বরবটি ৫০ টাকা কেজি, ঝিঙ্গা ৩০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।

কুষ্টিয়া শহরের মিউনিসিপ্যাল মার্কেটের খুচরা সবজি বিক্রেতা তানিম হোসেন বলেন, আমরা ব্যাপারি এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে দামে সবজি কিনি সেই দাম অনুযায়ী বিক্রি করি। দাম বাড়ানোর কারসাজি ব্যাপারি, আড়তদার এবং পাইকারি ব্যাপারিরা করে থাকেন। এসব সবজি কেনার ক্ষেত্রে ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ দিয়ে আমরা কেজিতে ৫-১০ টাকা লাভ করে থাকি।

এদিকে কুষ্টিয়া জেলা সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেছেন, কৃষি পণ্য উৎপাদিত কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত বিক্রয়ের মাঝে যে মূল্যের ফাঁক রয়েছে তা আগের থেকে অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। মূলত ব্যাপারি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা এই সুযোগ নিয়ে থাকে। তবে আমাদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত আছে। আশা করছি খুব দ্রুতই যেটুকু সমস্যা আছে তা সমাধান হয়ে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। আমাদের এই কুষ্টিয়া জেলায় ব্যাপক পরিমাণে বিষমুক্ত সবজি চাষ হয়। বিশেষ করে সদর উপজেলার ব্যাপক পরিমাণ জমিতে সবজি চাষ হয়ে থাকে। যা এখান থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়ে থাকে। আমরা কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সহায়তা প্রদান করে থাকি।

সুত্রঃ বার্তা২৪.কম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *