দাম বেড়ে যাওয়ায় সারে ভর্তুকি দিতে চলতি অর্থবছরে গত বারের চার গুণ অর্থ সরকারকে খরচ করতে হচ্ছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এভাবে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
সোমবার সচিবালয়ে সারের মজুত, দাম, ভর্তুকিসহ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন তিনি।
২০২১-২২ অর্থ বছরে সারে ভর্তুকি দিতে ২৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে জানিয়ে রাজ্জাক বলেছেন, এই টাকায় আরেকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।
কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশে বরাবরই কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। কোভিড মহামারীর মধ্যে কৃষি উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য ভর্তুকি দিয়ে যাওয়ার কথা সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বলে আসছেন।
দেশে যে সার উৎপাদন হয়, তা যথেষ্ট না হওয়ায় বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়। তবে এখন মজুত পর্যাপ্ত বলে সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রীই জানিয়েছিলেন।
সারের দাম বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে রাজ্জাক সোমবার বলেন, কোভিড পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য দাম বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ ভাড়াও প্রায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
তিনি জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি কেজি সারের আমদানি ব্যয় ছিল ইউরিয়া ৩২ টাকা, টিএসপি ৩৩ টাকা, এমওপি ২৩ টাকা, ডিএপি ৩৭ টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৬ টাকা, ৭০ টাকা, ৫৪ টাকা ও ৯৩ টাকা।
অথচ ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি সার কৃষককে দেওয়া হচ্ছে ইউরিয়া ১৬ টাকায়, টিএসপি ২২ টাকায়, এমওপি ১৫ টাকায়, ডিএপি ১৬ টাকায়।
রাজ্জাক বলেন, এর ফলে বর্তমানে ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৮২ টাকা, টিএসপি ৫০ টাকা, এমওপি ৪১ টাকা এবং ডিএপিতে ৭৯ টাকা। ভর্তুকি দিতে চলতি অর্থবছরে লাগছে ২৮ হাজার কোটি টাকা, যেখানে গত অর্থবছরে লেগেছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।
তিনি জানান, এবারের বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হলেও প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীর কোথাও এত ভর্তুকি দেওয়ার উদাহরণ নেই। ভর্তুকি কমাতে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপও রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি উপেক্ষা করে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন।”
এতে সরকার উভয় সঙ্কটে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “একদিকে এত ভর্তুকি দিলে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে, অন্যদিকে সারের দাম বাড়ালে কৃষকের কষ্ট বৃদ্ধি পাবে, উৎপাদন খরচ বাড়বে, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং খাদ্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
“সবদিক বিবেচনা করে আমরা নীতিগতভাবে এখনও সারের দাম না বাড়ানোর পক্ষে। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছি, তবে দাম না কমলে এই বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা কঠিন হবে।”
প্রয়োজনে সারে ভর্তুকির পরিমাণ কমানো বা সারের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সারের মূল্য ৪ দফায় কমিয়ে প্রতি কেজি টিএসপি ৮০ টাকা থেকে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা, ডিএপি ৯০ টাকা থেকে ১৬ টাকা এবং ইউরিয়া ২০ টাকা থেকে ১৬ টাকা করেছে।
বর্তমানে সারের মজুদ ও চাহিদা তুলে ধরে তিনি জানান, চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে প্রায় ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ লাখ টন, টিএসপি সাড়ে ৭ লাখ টন, এমওপি সাড়ে ৭ লাখ টন এবং ডিএপি সাড়ে ১৬ লাখ টন।
গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের কোনো সঙ্কট হয়নি বলে কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বলে দাবি করেন কৃষিমন্ত্রী।
মন্ত্রী জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দানাদার শস্যের উৎপাদন হয়েছে ৪৫৫.০৫ লাখ টন, পেঁয়াজ ৩৩ দশমিক ৬২ লাখ টন এবং পাট ৭৭ দশমিক ২৫ লাখ বেল।
সুত্রঃবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম