নিউজ ডেস্কঃ
বরিশালে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালীন উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি ধান-৮৭ চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। কম সময়ে উৎপাদিত ধান ঘরে তুলতে পারায় আগাম ধান কেটে অন্যান্য রবি শস্য উৎপাদনের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। এই ধানে চিটা এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম। বেশী ফলন এবং চাল চিকন ও সাদা বর্নের হওয়ায় নতুন জাতের এই ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকরা নিয়ম মেনে নতুন জাতের এই ধান চাষ করার পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যা করায় প্রত্যাশার চেয়েও ফলন বেশী হয়েছে। সারা দেশে কৃষকের মাঝে নতুন জাতের এই ধানের চাষ ছড়িয়ে দিতে পাড়লে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চত হবে আশা কৃষি বিজ্ঞানীদের।
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটর উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৭৬ এর বীজ রোপনের পর কর্তনে সময় লাগে ১৬৩দিন এবং ব্রি ধান-৭৭ কর্তনে লাগে ১৫৪ দিন সময়। দুটি জাতেই গড়ে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হয়। কৃষি বিজ্ঞানীরা আরও কম সময়ে উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের গবেষণা শুরু করেন। ২০১৮ সালে ব্রি ধান-৮৭ নামে নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেন বিজ্ঞানীরা। গত বছর পরীক্ষামূলক চাষের পর এবার স্বল্প পরিসরে অংশিদারমূলক পদ্ধতিতে কৃষক পর্যায়ে এই ধানের চাষ হয় বরিশালের রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসের পতিত জমিতে।
ধানের বীজ রোপনের ১২৫ থেকে ১৩০ মধ্যে ফসল ঘরে তুলেছে কৃষক। ফলনও হয়েছে বাম্পার। প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ মেট্রিক টন ধান। যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশী। চিটাও নেই বললেই চলে। এতে খুশি কৃষকরা। আগাম ফসল কর্তন করতে পাড়ায় ওই জমিতে এখন সরিষা, আলু সহ অন্যান্য রবি শস্য করার উদ্যোগ নিয়েছেন কৃষকরা। বাম্পার ফলনের খবরে প্রতিদিনই আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা দেখতে আসছেন নতুন জাতের ধান। তারাও আগামীতে উচ্চ ফলন পেতে এই ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। রহমতপুরের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন।
বরিশালের রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপ-সহকারী প্রশিক্ষক মো. কামাল হোসেন জানান, সঠিক সময়ে কৃষকদের হাতে সঠিক বীজ তুলে দিয়েছেন তারা। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে চাষাবাদ এবং নিবিড় পরিচর্যা করায় নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৮৭ এর ফলন বাম্পার হয়েছে।
রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কৃষিবিদ জিএম ইদ্রিস জানান, আগাম ধান কর্তন করায় কৃষকরা এখন রবি শস্য চাষ করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে কৃষকের উৎপাদন এবং আয় দুটোই বাড়বে। এই ধান কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পাড়লে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে আশা তার।
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ব্রি এর প্রধান ড. মো. আলমগীর হোসাইন জানান, নতুন জাতের এই ধানের চাল চিকন এবং বর্ন সাদা। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষকরা এই ধান চাষ করলে লাভবান হবেন। নতুন জাতের ব্রি ধান-৮৭ আগামী আমন মৌসুমে কৃষকের কাছে প্রধান জাতের ধান হিসেবে পরিগনিত হবে। সারা দেশে কৃষক পর্যায়ে এই ধানের চাষ ছড়িয়ে দিতে নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন তিনি।
এবার বরিশাল জেলায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্মকর্তা নাহিদ-বিন রফিক।
সুত্রঃ বিডি-প্রতিদিন