হঠাৎ বৃষ্টিতে বগুড়ায় আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজহঠাৎ বৃষ্টিতে বগুড়ায় আলু চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

মাঘ মাসের শেষের দিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে বগুড়ায় আলুর আবাদ নিয়ে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বৃষ্টিতে অধিকাংশ আলু ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এ পানি অপসারণ করা না গেলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আলু চাষিরা।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বগুড়ায় এ বছর ৫৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৮৭ হাজার টন। কিন্তু ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় ভারী বৃষ্টি হয়। এ দুদিনে ৩১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে অধিকাংশ আলু ক্ষেতে পানি জমে যায়। অসময়ে হঠাৎ বৃষ্টিপাতের কারণে আলু রক্ষায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ আলুর জমিতে বৃষ্টির পানি জমে আছে। আটকে থাকা পানি সরাতে জমির আইল কেটে, বালতি বা বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে জমির পানি সেচের কাজ করছেন কৃষকরা। আবার অনেকে সময়ের আগেই আলু তুলে ফেলছেন আলু।

শিবগঞ্জ উপজেলার মেদিনীপুর পন্নাতপুর এলাকার আলু চাষি লিয়াকত আলী বলেন, তার পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করা আলু পানিতে তলিয়ে গেছে। জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের কোনো উপায় নেই। পরিবার নিয়ে এবার হয় তো পথে বসতে হবে।

 

উপজেলার আলীগ্রামের আলু চাষি মাফিজুল বলেন, আমি ৭৩ শতক জমিতে আলু চাষ করেছি। মাঘের বৃষ্টিতে আমার আলু ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আলুর গাছ পচে গেছে। জানি না ভাগ্যে এবার কি জুটবে।

শিবগঞ্জ দহিলা গ্রামের কৃষক সজিব বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি, ভালো ফলন হয়েছিল। এক সপ্তাহের মধ্যেই আলু তোলা হতো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আগেই তুলতে হচ্ছে আলু। জমিতে খরচ হয়েছিল ৬৫ হাজার টাকা, ৩০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।

জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, এক দিনের বৃষ্টিতে এলাকার অনেক জমিতে পানি বেঁধেছে। জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে ক্ষতির আশঙ্কা কিছুটা কম হবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কৃষকের আলুর জমির পানি নিষ্কাশন এবং আলু তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিদের তালিকা তৈরি করে সরকারি সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করা হবে।

 

এদিকে নন্দীগ্রাম উপজেলার রিধইল, কাথম, বেরাগাড়ী, কুন্দারহাট, কালিশ, পুনাইল, হাটকড়ইসহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। জমে থাকা পানি অপসারণ করা না গেলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আলু চাষিরা।

উপজেলার ভাটগ্রামের কৃষক আক্কাস আলী এ বছর তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেন। হঠাৎ বৃষ্টিতে আলুর জমিতে পানি জমেছে। এখন জমে থাকা পানিগুলো লোকজন দিয়ে সরানোর ব্যবস্থা করছেন। আবার বৃষ্টি হলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচলক এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত জেলায় ২৬ শতাংশ আলু উত্তোলন করা হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আলু হিমাগারে রাখার পরিপুষ্ট হয়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, আলুর ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি বের করে দেওয়ার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জমে থাকা পানি দ্রুত অপসারণ করলে আলুর ক্ষতি হবে না। তবে জমিতে পানি জমে থাকলে আলুর ক্ষতি হবে। এছাড়া যাদের জমির বয়স হয়েছে তাদের আলু তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এখন রোদ উঠলে এই ফসল রক্ষা করতে পারবে কৃষক।

সুত্রঃ জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *