মোরশেদ আলম.যশোর প্রতিনিধি
যশোরের কেশবপুরে প্রান্তিক চাষিরা হলুদ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার হাসানপুর, বরনডালি, মৃর্জানগর, চাঁদড়া, বড়েঙ্গা, মঙ্গলকোট, মজিদপুর, দোরমুটিয়া ও সাতবাড়িয়াসহ অন্যান্য গ্রামের কৃষকেরাও হলুদ চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। অনুর্বর জমিতে কম পুঁজিতে ও নাম মাত্র শ্রমে অধিক মুনাফা পাওয়ায় উপজেলায় হলুদ চাষির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার হলুদ সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
অনুর্বর জমিতে, অল্প পুঁজিতে সল্প ব্যয়ে অধিক মুনাফা পাওয়ায় উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতেও হলুদ চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় এবছর উপজেলায় ২শ একর জমিতে বানিজ্যক ভাবে হলুদ চাষ করা হয়েছে। তাছাড়া বিচ্ছিন্ন ভাবে বাড়ির আঙ্গীনায় নিজেদের ব্যবহারের জন্য আরও কমপক্ষে ৪০-৫০ একর জমিতে হলুদ চাষ করেছে কৃষকরা। আশানুরুপ দাম পাওয়ায় আগামীতে হলুদ চাষির সংখ্যা ও পরিমান দ্বিগুন হতে পারে বলে জানালেন অনেক প্রান্তিক চাষি। চাষিরা বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে উন্নত জাতের ডিমলা ও সুন্দরী হলুদ চাষ করা হলেও দেশীয় জাতের হলুদই বেশি চাষ করা হয়।
সাধারণত বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে হলুদ রোপন করা হয়। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে হলুদ তোলা হয়। রোপনের আগে আড়াআড়ি ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করে রোপন করতে হয়। লাঙল দিয়ে ৩/৪ সে.মি গভীর করে লাইন টেনে ৬-৮ ইঞ্চি অন্তর চোখসহ হলুদের ধানা রোপন করে মাটি চাপা দিতে হয়। গজানো গাছ মাটির ৬-৮ ইঞ্চি উপরে উঠে আসলে কোদাল দিয়ে অনেকটা আলু ক্ষেতের মতো মাটি দিতে হয়। তাছাড়া ৬মাসের এই মসলা জাতীয় ফসলে সর্বোচ্চ ২বার নিড়ানী দিতে হয়।
জমি তৈরি, রোপন, নিড়ানী ও তোলা ছাড়া আর কোন খরচ নেই। জমি তৈরি থেকে তোলা পর্যন্ত প্রতি কাঠা (৫ শতাংশ) তে খরচ হয় সর্বোচ্চ ১হাজার টাকা। অনেক হলুদ চাষী বলেন, প্রতিকাঠাতে বীজ হলুদ লাগে ২০ থেকে ২২ কেজি এবং উৎপাদন হয় ৮ থেকে ১২ মন। বর্তমান বাজার মূল্য শুকনা প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং কাঁচা হলুদ প্রতিমন ৪৮০ টাকা থেকে ৫২০ টাকা। ফলে বর্তমান দাম অনুযায়ী প্রতি কাঠাতে লাভ থাকে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। যা অন্য কোন কৃষিপণ্যে সম্ভব নয়। বরনডালি গ্ৰামের কৃষক নাজিমউদ্দিন বলেন, তার ১একর জমিতে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আশা করছেন ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকার হলুদ পাবেন তিনি। তিনি বলেন, আগামীতে কমপক্ষে আরও ২একর জমিতে হলুদ চাষ বাড়াবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বলেন, কেশবপুরের মাটি হলুদ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। হলুদে তেমন কোন ধরনের রোগবালাই নেই বললেই চলে। হলুদ আবাদ সাধারণত ৯ মাস ব্যাপি হয়ে থাকে। এ উপজেলার কৃষকরা সাধারণত মাখালবাড়ি, ডিমলা ও স্থানীয় জাতের হলুদের আবাদ বেশি করে। সুন্দর ভাবে পরিচর্যা করলে হলুদ বিঘা প্রতি ১২৫ মণ উৎপাদন হয়। এ বছর হলুদের আবাদ হয়েছে ৬০০ বিঘা, আর গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪৫০ বিঘা। যা গত বছরের তুলনায় ১৫০ বিঘা বেশি। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সবসময় সহযোগিতা, পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আগামীতে কৃষকের মশলা জাতীয় ফসল চাষের আগ্রহ বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করছেন।