হাওরে বাড়ছে পানি, ফসল রক্ষায় কৃষকের কপালে ভাঁজহাওরে বাড়ছে পানি, ফসল রক্ষায় কৃষকের কপালে ভাঁজ

ভারতের মেঘালয়ে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে জেলার ফসলরক্ষা বাঁধগুলো ঝুঁকির মুখে পরার আশঙ্কা রয়েছে।

গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদীগুলো পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়েছে প্রায় ১২০ হেক্টর জমির ফসল। আর রবিবার রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওরের আনন্দ নগর গ্রামের বাঁধের কিছু অংশ ধসে যায়। পরে নিজ উদ্যোগে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করে স্থানীয়রা।

 

এদিকে শনিবার থেকে হাওরের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বাড়লেও তা এখনও বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে এবং ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী জানান, ‘এ বছর জেলার হাওরাঞ্চলে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এই আবাদের সঙ্গে অন্তত এক লাখ ৮০ হাজার কৃষক জড়িত। হাওরে এক ফসলি জমি হওয়ায় সেখানকার কৃষকদের এই বোরো ফসলের ওপরই নির্ভর করতে হয়।’

৩০ মার্চ থেকে উজানের ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধের আওতায় নয় এমন হাওরের নিম্নাঞ্চলের ১১৩ হেক্টর বোরো ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, ধনু ও বাউলা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ থেকে প্রবল বেগে পানি ঢুকেছে কিশোরগঞ্জের হাওরে। এরইমধ্যে ডুবে গেছে দুইশো একর বোরো ধানের জমি।

 

তাই বন্যার আশংকায় অনেক কৃষক পুরোপুরি পাকার আগেই কাটতে শুরু করেছেন ধান।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক বলেন, খালিয়াজুরীর লক্ষ্মীপুর, চুনাই হাওর, বাইদ্যার চর, কাটকাইলের কান্দা ও কীর্তনখোলা হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে গেছে। তবে এখনো কোনো ফসল রক্ষা বাঁধ ভাঙেনি। পানি বাড়তে থাকলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। খালিয়াজুরীর গাজিপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট এলাকার মিজাজুল মিয়া বলেন, বৈলং হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকা তলিয়ে গেছে। আরেকটু পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে হাওরের ফসল তলিয়ে যাবে।

পাঁচহাট গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মাদ বলেন, ‘ফসল রক্ষা বাঁধের বাইরে আমাদের কয়েক কৃষকের প্রায় ২০ একর আধা পাকা ধান তলিয়ে গেছে। সারা বছরের একমাত্র ফসল চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কিছুই করার নেই। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ হয়েছে। কিন্তু কৃষি বিভাগ থেকে আগাম জাতের ধানের চাষের পরামর্শ দিলে এমন ক্ষতি হতো না।’

নেত্রকোনায় এরইমধ্যে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের ১১৩ হেক্টর বোরো ধান। ফসল রক্ষা বাঁধ নিরাপদে রাখতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮টি টিম।

দেশের খাদ্যশস্যের একটি বড় জোগান আসে হাওর থেকে। বিশাল হাওর বিস্তৃত সাত জেলা নিয়ে। এ জমির পুরোটাই এক ফসলি। হাওরের বোরো ধান রক্ষায় রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। এ বাঁধ তলিয়ে গেলে মানুষের দুর্দশার সীমা-পরিসীমা থাকে না। তাই বাঁধ নিয়ে শঙ্কা বোরো ফসল না তোলা পর্যন্ত কাটে না কৃষকের।

সুত্রঃ independent

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *