হাতজাল পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত ধানচাষ, হেক্টরপ্রতি ফলন ৬ মেট্রিক টনহাতজাল পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত ধানচাষ, হেক্টরপ্রতি ফলন ৬ মেট্রিক টন

নিউজ ডেস্কঃ
কোন প্রকার কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই শুধুমাত্র হাতজাল পদ্ধতিতে ধান চাষ করে পাওয়া যাবে কীটনাশকমুক্ত ধান। চলতি মৌসুমে ১৫ হেক্টর জমিতে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে বরিশাল ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট। এছাড়াও এই হাতজাল পদ্ধতিতে হেক্টরপ্রতি ৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।

কৃষি বিভাগ বলছে, ধানের আবাদ করার সময় কৃষকেরা সাধারণত গড়ে তিনবার খেতে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। মাজরা, পাতামোড়ানো, বাদামি গাছফড়িং ও গান্ধি পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকেরা এই বালাইনাশক ব্যবহার করেন।
ব্রি সূত্র জানায়, বীজতলা থেকে ধানের জমিতে চারা রোপণের ১০ দিন পর প্রতি ১০০ বর্গমিটারে একটি করে গাছের ডালপালা পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। এরপর হাতজাল দিয়ে পার্চিং করে ক্ষতিকর এসব পোকা নিধন ও উপকারী পোকা সৃজনের ব্যবস্থা করা হয়।

ব্রি বরিশালের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কীটতত্ত্ববিদ মনিরুজ্জামান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ধানখেতে মূলত মাজরা পোকার আক্রমণ বেশি। সকালের নরম আলোয় মাজরা পোকার মথ (পূর্ণবয়স্ক মাজরা পোকা) ধানের পাতার ওপরের দিকে বসে থাকে।

তিনি বলেন, ‘গবেষণায় দেখা যায়, সকাল সকাল হাতজাল দিয়ে সুইপ করলে পোকা দমনে সফলতা বেশি পাওয়া যায়। মূলত এবার আমরা পরীক্ষামূলকভাবে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। এখন আমরা চাই প্রযুক্তিটি কৃষকদের মধ্যে মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে।’

ব্রির গবেষকেরা জানান, চারা রোপণের ১৪ দিন পর থেকে ধানের শিষ বের হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার হাতজাল দিয়ে সুইপিং করে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকার তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। এরপর জাল দিয়ে সুইপিং করে সেসব পোকা ধরে ক্ষতিকর পোকা মেরে ফেলা এবং উপকারী পোকা খেতে পুনরায় ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এতে ধানের খেতে উপকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন হয়। ২৬৬ প্রজাতির ক্ষতিকর পোকা

ব্রির এক গবেষণা বলছে, দেশে ধানখেতে ২৬৬ প্রজাতির ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৩টি প্রজাতিকে প্রধান অনিষ্টকারী পোকা হিসেবে ধরা হয়। এসব পোকার আক্রমণে দেশে বোরো মৌসুমে প্রায় ১৩ শতাংশ, আউশ মৌসুমে প্রায় ২৪ শতাংশ এবং রোপা আমন মৌসুমে প্রায় ১৮ শতাংশ ফলন নষ্ট হয়। আর তিন মৌসুমে দেশে পোকার আক্রমণে গড়ে ১৮ ভাগ পর্যন্ত ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রির কীটতত্ত্ব বিভাগের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী কৃষকেরা এক মৌসুমে ধান উৎপাদনে গড়ে সাধারণত তিনবার কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে।

হাতজাল পদ্ধতি সম্পর্কে ব্রি, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে হাতজাল দিয়ে পার্চিং প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে আশানুরূপ সফলতা পেয়েছি। পরিবেশবান্ধব এ প্রযুক্তিটি কৃষকদের মাঠে দ্রুত সম্প্রসারণ করা গেলে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

উল্লেখ্য হাতজাল পদ্ধতিটি হচ্ছে মূলত চিকন রড অথবা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তোলাকৃতির হাতলওয়ালা বেড় তৈরি করে তাতে জাল লাগিয়ে ফসলের খেতে ডানে-বামে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোকা ধরার একটি স্থানীয় পদ্ধতি। এই হাতজাল দিয়ে খেত পোকামুক্ত করার পদ্ধতিকে সুইপিং বলে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *