চট্টগ্রাম মহানগরে ঔষধি প্রজাতির ১৩৭টির বেশি বৃক্ষ এখন হুমকির মুখে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বিলুপ্ত হতে পারে এসব বৃক্ষ। একই সঙ্গে নগরায়ণ ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণে ইতিমধ্যে বিপন্ন হয়ে গেছে ১৩ প্রজাতির বৃক্ষ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেলের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়। গত মার্চে শুরু হওয়া গবেষণায় মহানগরের ২০টি বিশেষ এলাকা যুক্ত করা হয়। গবেষণাসূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মহানগরে ৪৯৫ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এর মধ্যে বড় বৃক্ষ ১৭৭ প্রজাতি, ছোট (গুল্ম-জাতীয়) ৮৬ প্রজাতি, মাঝারি (বীরুৎ-জাতীয়) ১৭৯ প্রজাতি, লতা-জাতীয় ৩৫৪ প্রজাতি, ৩৬৬টি প্রজাতি পাওয়া গেছে যেগুলো ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া ৩০টির বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ এখনো শনাক্ত করা যায়নি। অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক রাসেল বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয় এমন ১৩ প্রজাতির উদ্ভিদ হারিয়ে গেছে। একই সঙ্গে হুমকিতে আছে আরও ১৩৭টি ওষুধি উদ্ভিদ। কিন্তু পাহাড় নিধন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ না করলে হুমকির মুখে থাকা উদ্ভিদও বিপন্ন হয়ে যাবে। তা ছাড়া শনাক্ত ৪৯৫টি উদ্ভিদের মধ্যেও অনেক বৃক্ষ হারিয়ে যাবে। এখন দরকার পরিবেশ রক্ষা ও পরিকল্পিত নগরায়ণ।
জানা যায়, মহানগরের বিশেষ ২০টি এলাকায় পরিচালিত হয় গবেষণা। এর মধ্যে সিআরবিতে মোট উদ্ভিদ আছে ২২৩টি, সিএমসিসংলগ্ন পাহাড়ে ২০১টি, ডিসি হিলে ১৩২টি, ওয়ার সিমেট্রিতে ৯১টি, প্রবর্তক মোড়ে ১১৭টি, টাইগার পাসে ২১০টি, মুরগি ফার্ম এলাকায় ২৩৫টি, রেলওয়ে সেগুনবাগান এলাকায় ৪৯টি, কাননধারা আবাসিক এলাকায় ১৩৫টি, গোল পাহাড় এলাকায় ১২৭টি, ডাকবাংলা পাহাড় এলাকায় ১০৬টি, ডানকান পাহাড় এলাকায় ১৮১টি, গোলাপ মিয়া পাহাড় এলাকায় ১৫৯টি, বাটালি হিল এলাকায় ২২৪টি, বায়েজিদ লিঙ্ক রোড এলাকায় ২১৬টি, মতিঝর্ণা এলাকায় ১৯৯টি, মেরিন ড্রাইভ এলাকায় (ফৌজদারহাট-কাটগড়) ৪৫টি, বিভিন্ন রাস্তার পাশে ৫৩টি ও এমইএস কলেজসংলগ্ন পাহাড় এলাকায় ১৩০টি। গবেষণায় রোগভিত্তিক উল্লেখযোগ্য ওষুধি গাছের মধ্যে আছে- চর্ম রোগের জন্য চালমুগড়া, মিঠা আলু, পাতিলতা ফার্ন, ঝুমকোলতা, জংলিবাদাম, কাঠবাদাম ও নিশিন্দ। আলসারের জন্য বন আলু, গেজিয়া শাক, পাকুড়, আমলকী ও গোলমরিচ। ডায়াবেটিসের জন্য দমন মোস্তা, বিদ্যাপাতা, দেশি ছোট এলাচ, নটি শাক, বনশিমুল, ছোট আকন্দ ও বরুণা। জন্ডিসের জন্য বনশিমুল, কুকুরচিতা, গোলমরিচ, ললনা ও হরিণা। যক্ষার জন্য মুক্তাঝুড়ি, ডাবেরক্রেপি, ডাঘ্নো মদি, কালো তুলসী, গন্ধবাডালি ও ধারমারা। মানসিক রোগের জন্য সাদা কাঞ্চন, ভাটিয়ালতা, সোনাতল, চালমুগড়া, কেড়োগেথিস, লতা ঢেঁকি, গন্ধলি ও ভেরেন্ড। বাত রোগের জন্য ঝুনঝুনি, শিলাঝড়া, কুকুরচিতা, হরিণা, ছাতিম ও বিষলতা। হাঁপানি রোগের জন্য বাংলা বট, ঝজ্ঞা ডুমুর, কুরচি, কুকুরচিতা, অশোক ও রঙ্গন।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন