নিউজ ডেস্কঃ
সমুদ্রপথে কত টন পেঁয়াজ আসছে এত দিন তার ওপর নির্ভরশীল ছিল পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দামে ওঠানামা। এখন উল্টো ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বিভিন্ন দেশ থেকে ১৪ হাজার টন পেঁয়াজ এনে বন্দরে জমা করে রেখেছেন আমদানিকারকরা। ‘পর্যাপ্ত দাম’ না পাওয়ায় এসব পেঁয়াজ বন্দর থেকে দ্রুত ছাড় নিচ্ছেন না তাঁরা। আসার পথে জাহাজে রয়েছে আরো অনেক পেঁয়াজ।
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজ ও ফলভর্তি বিপুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়েছে। ইয়ার্ডে বিশেষায়িত এসব কনটেইনার রাখার স্থান না থাকায় জাহাজকে বাড়তি এক দিন জেটিতে বসে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় জমে থাকা পেঁয়াজ, ফলভর্তি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনার সরাতে গত সোমবার আমদানিকারকদের চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে পরিমাণ পেঁয়াজ জাহাজ থেকে নামছে সে পরিমাণ পেঁয়াজ বন্দর থেকে ছাড় নিচ্ছেন না আমদানিকারকরা। এর ফলে এসব কনটেইনার ইয়ার্ড ভর্তি হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে গতকাল পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনার তিন হাজার ১৮৭ একক কনটেইনার। এর মধ্যে এক হাজার ২৬৬ একক কনটেইনারই হচ্ছে পেঁয়াজের। বাকি কনটেইনারে আছে আদা, রসুন ও বিদেশি ফল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনার রাখার স্থান না থাকায় জাহাজকে অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি সময় জেটিতে থাকতে হচ্ছে; এতে আমাদের প্রডাক্টিভিটি নষ্ট হচ্ছে।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনার রাখা যায় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৬০০ একক; গতকাল সোমবার পর্যন্ত ছিল তিন হাজার ১৮৭ একক; ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ছিল ৫৮৭ একক কনটেইনার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ রাখতে হয় এ জন্য প্রতিটি কনটেইনারের জন্য রয়েছে একটি বিদ্যুৎ সংযোগ পয়েন্ট। বন্দরে এই ধরনের পয়েন্ট রয়েছে মাত্র এক হাজার ৬০০। একটি কনটেইনারে একাধিক সংযোগ দিয়ে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গতকাল পর্যন্ত ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ ছাড়পত্রের অনুমতি দিয়েছে কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর। এর মধ্যে ১৯ হাজার টন বন্দর থেকে ছাড় করা হয়েছে; বন্দরে জমে আছে ১৪ হাজার টন। বহির্নোঙরে জাহাজে আছে ৩২২ একক কনটেইনার আর আসার পথে রয়েছে আরো প্রচুর পেঁয়াজ।
বন্দর থেকে পেঁয়াজ ছাড় না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমদানিকারক কায়েল স্টোরের মালিক কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ছাড় নেব কিভাবে। পেঁয়াজে সয়লাব হয়েছে বাজার; আসার পথে রয়েছে আরো প্রচুর পেঁয়াজ। দাম যেভাবে কমে গেছে কেনা দামই তো উঠছে না। বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৫০ টাকার মতো, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকার নিচে। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেখা যাবে অনেক পেঁয়াজ বন্দর থেকেই ছাড় নেবেন না আমদানিকারক; নতুন করে আমদানিতে উৎসাহিত হবেন না কেউ।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল মঙ্গলবার মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি দামে কেজি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়, বাকিগুলো এর চেয়ে কেজি ১০ টাকা কমে। চীনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩৫ টাকায়, তুরস্কের পেঁয়াজ ৫০ টাকায়, মিসরের ৩৮-৪০ টাকায়; পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, ইরানি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকা, নিউজিল্যান্ডের পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি ৬৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কেনা দামের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি করায় অনেক আমদানিকারক পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। সেই সঙ্গে অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে তাঁরা তো কোনো দামই পাননি।’
সুত্রঃ কালের কণ্ঠ