৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন কৃষক, তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন কৃষক, তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল

কৃষি খাতের জন্য নতুন করে তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিলের আওতায় ব্যাংক থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন কৃষক। আর ব্যাংকগুলো এই প্যাকেজ থেকে ১ শতাংশ সুদে তহবিল পাবে।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ এই ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে ১৮ মাসের মধ্যে। তহবিলের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।

ঋণচুক্তি ও তহবিল বরাদ্দ-

ঋণ নেয়ার জন্য ইচ্ছুক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি করবে। সার্কুলার জারির পর ১৫ দিনের মধ্যে এ চুক্তি করতে হবে।

কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা, ঋণ বিতরণের সক্ষমতা ইত্যাদির ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে তহবিল বরাদ্দ করা হবে। ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক পরে প্রয়োজনবোধে তহবিলের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে।

তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত মানতে হবে। যেমন-
ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করবে। বর্তমান গ্রাহকদের মধ্য থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বা গ্রাহককে বিদ্যমান ঋণসুবিধার অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর সর্বোচ্চ সীমা ১০ কোটি টাকা।

ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের শস্য বা ফসল চাষের জন্য এককভাবে জামানতহীন (শুধু ফসল দায়বন্ধনের বিপরীতে) সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ঋণ দেয়া যাবে।

গৃহস্থালি পর্যায়ে গাভি পালন, গরু মোটাতাজা খাতে ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ প্রদানে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

শস্য ও ফসল ঋণ ব্যতীত অন্যান্য খাতের ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম জামানত গ্রহণের বিষয়ে ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে।

এ তহবিলের ঋণ কোনোভাবেই গ্রাহকের পুরোনো ঋণ সমন্বয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।

ঋণখেলাপিরা এ তহবিলের ঋণ নিতে পারবেন না।

কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত শস্য ও ফসল খাতের আওতাভুক্ত দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাকসবজি, কন্দাল ফসল ফল ও ফুল চাষ, মৎস্য চাষ, পোলট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাত, কৃষি ও সেচ যন্ত্রপাতি, বীজ উৎপাদন খাতসমূহে ঋণ বিতরণ করা যাবে।

আমদানি বিকল্প ফসল, যেমন ডাল, তেলবীজ, মসলাজাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষে গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ বিতরণের পৃথক স্কিম চালু থাকায় এ খাতে বিশেষ তহবিলের এ ঋণ দেয়া যাবে না।

বরাদ্দকৃত তহবিলের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শস্য ও ফসল খাতে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যাংকগুলো পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ থেকে অনধিক ১৮ মাসের (১২ মাস + গ্রেস পিরিয়ড ৬ মাস) মধ্যে আসল এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদ পরিশোধ করবে।

কৃষক বা গ্রাহক পর্যায়ে শস্য বা ফসল খাতে বিতরণকৃত ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ১২ মাস। অন্যান্য খাতে বিতরণকৃত ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ন্যূনতম ৩ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস।

ঋণ বিতরণ শুরু করার পর অংশগ্রহণকারী ব্যাংক মাসিক ভিত্তিতে পুনঃঅর্থায়ন দাবি করতে হবে।

তহবিলের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিতরণসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র, বিতরণকৃত ঋণের বিবরণী, পরিশোধের প্রতিশ্রুতিপত্র ও লেটার অব কন্টিনিউটি, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বরাবর দাখিল করতে হবে।
বিভিন্ন দফায় ব্যাংকের অনুকূলে ছাড় করা অর্থ সংশ্লিষ্ট দফার মেয়াদ পূর্তির মধ্যেই সুদসহ আসলের সব অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করতে হবে।

ঋণের বকেয়া নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিশোধিত না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাব বিকলন করে তা সমন্বয় করা হবে।

স্কিমের আওতায় প্রদত্ত ঋণের অর্থ বা এর কোনো অংশের সদ্ব্যবহার না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সে পরিমাণ অর্থের ওপর নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে সুদ ধার্য করে এককালীন আদায় করবে।

কোনো ব্যাংক সুদ বেশি নিলে নির্ধারিত ৪ শতাংশ ছাড়াও অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে এককালীন আদায় করা হবে।
সুত্রঃ অপরাজেয় বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *