আমের রাজধানী নামে খ্যাত রাজশাহীতে লোকসানের শঙ্কা নিয়েই গাছ থেকে আম পাড়া শুরু করেছে চাষি ও ব্যবসায়ীরা। গাছ থেকে আম পাড়ার সময় বেশ কদিন আগেই শুরু হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকুল না থাকায় আম পাড়েননি চাষিরা। বিভিন্ন কারণে এবার লোকসানের কথা চিন্তা করেই গতকাল শুক্রবার থেকে রাজশাহী ও বিভিন্ন উপজেলার চাষিরা গাছ থেকে আম পাড়া শুরু করেছেন। তবে শুরুতে বাজার দর নিয়ে খুশি হননি আম ব্যবসায়ীরা। তবে এরই মাঝে আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। আগামী ক’দিনে প্রত্যাশিত দাম পাওয়ারও আশা করছেন তারা। চাষিরা বলছেন রাজশাহীর আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়া শুরু হলেই হয়তো দাম ভালো পাবেন তারা। এক সপ্তাহের মধ্যে রাজশাহীর আমের হাটবাজার জমে উঠবে বলেও আশা করছেন আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা। এদিকে ভালো খবর দিচ্ছে রেলওয়ে। আগামী ৫ জুন রহনপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী হয়ে আমের প্রথম চালান নিয়ে ঢাকার পথে রওনা দেবে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন। এমনটাই জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ।

জানা গেছে, এবার জেলা প্রশাসন থেকে প্রথম দফায় ১৫ মে রাজশাহীতে দেশীয় জাতের গুটি আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০ মে থেকে গোপালভোগ আম পাড়া শুরুর কথা ছিল। ৬ জুন আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন, আশ্বীনা ১০ জুলাই থেকে পাড়া শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু আম পরিপাক্ক না হওয়া ও দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে চাষিরা গাছ থেকে আম পাড়েননি। দ্বিতীয় দফায় ২৫ মে ল্যাংড়া, খিরশাপাতসহ অন্যান্য জাতের আম গাছ থেকে নামানোর কথা ছিল। কিন্তু আম গাছ থেকে নামানোর আগেই আম্ফানের কবলে পড়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এ আম এখনো পুরোপুরি পাকার উপযোগি হয়নি। এতে আবারো বিলম্ব হয় গাছ থেকে আম নামাতে। শুধু দেরি নয় আম্ফানের কারণে ঝড়ে পড়েছে গাছের প্রায় ২০শতাংশ আম। এতে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে চাষিরা। বিশেষ করে যারা আম বাগান ইজারা নিয়ে আম চাষ করেছেন তাদের ক্ষতির পরিমান বেশি। ঝড়ে পড়ে যাওয়ার আমের লোকসান পোষাতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয়ের মধ্যে আছেন আম চাষিরা। তারপরও চাষিরা নতুন উদ্যমে বাগান থেকে আম পাড়তে শুরু করেছে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, আমপাড়া শুরু করার পর রাজশাহীর হাট বাজারগুলোর আড়ৎ ঢেলে সাজানো হচ্ছে। উপজেলার পাশাপাশি রাজশাহী নগরীর আড়ৎদারাও তাদের বন্ধ থাকা আড়ৎ খুলতে শুরু করেছেন। আড়ৎ খোলার পর বিভিন্ন জায়গায় আম পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। একই সাথে আড়ৎদাররা কুরিয়ার সার্ভিসের সাথেও যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। দুর দুরান্তের ব্যবসায়ীদের সাথে চলছে আলাপ আলোচনা। বলা যায় বাইরে আম রফতানীর জন্য চলছে জোর প্রস্তুতি। আশার খবর রাজশাহী থেকে ৩১ মে থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। এছাড়াও সীমিত আকারে অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করবে এই আশায় আম ব্যবসায়ী, চাষিরা গাছ থেকে আম পাড়া শুরু করছেন। এছাড়াও কুরিয়ার সার্ভিসের পক্ষে থেকেও ঢাকাসহ বাইরের জেলাগুলোতে আম পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে বর্তমানে বাজারে বড় ব্যবসায়ীরা আম কিনছে না। যে আম বিক্রি হচ্ছে তা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনছেন।

এদিকে এবার শুরুতে আমের বাজার দর একেবারে কম। এখন পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত পরিমান আম দেখা না গেলেও দামের দিক থেকে ব্যবসায়ীরা হতাশ। রাজশাহীর বড় আমের হাট বানেশ্বর ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে আসলেও দাম পাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় হাট বানেশ্বরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশীয় জাতের আঁটি আম ৭ শ’ থেকে ৯ শ’ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। গোপালভোগ ১২ শ’ থেকে ১৫ শ’ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে হচ্ছে। এ জাতীয় প্রায় সব আমের দামই এক। ব্যবসায়ীরা বলছেন সামনে সপ্তাহের মধ্যে আম বাজারে উঠতে শুরু করবে। আর যদি এমন দাম থাকে তাহলে চাষিদের মাথায় হাত পড়বে।

বানেশ্বর বাজারের আমের আড়ৎদার মাসুদ রানা জানান, অন্য বছরে এই সময় বানেশ্বর বাজারে পুরোদমে আম কেনাবেচা শুরু হয়। কিন্তু এবার এখনো আম কেনাবেচা শুরু হয়নি। তিনি জানান, তার আড়ৎ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পাঠানো হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে সবে মাত্র আড়ৎ খোলা হয়েছে। শুধু তার আড়ৎই নয়, মাসুদের মত অনেক আড়ৎদারই শুক্রবার থেকে আড়ৎ খুলতে শুরু করেছেন। এছাড়াও আমের ঝুড়ি তৈরি করা লোকজনও বৃহস্পতিবার থেকে আম বহন করা ঝুরি বাজারে তুলতে শুরু করেছেন।

এদিকে এবার ট্রেনে মাত্র দেড় টাকা কেজিতে ঢাকায় আম পাঠানো যাবে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানিয়েছেন এ মওসুমে আমের উপর দিয়ে বিপর্যয় বয়ে গেছে। একদিকে লকডাউন অন্যদিকে আম্ফানের ছোবল। যার কারণে আম বাইরে পাঠানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। ঢাকাসহ বাইরের জেলায় আম পাঠাতে সার্বিক সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন। আম চাষি বা ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারেও নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

আমাদের চারঘাট প্রতিনিধি জানান, চারঘাট উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেল, আমের দোকানে বিক্রি হচ্ছে পেয়ারা, লিচু, ডাবসহ নানা ফলমুল। চারঘাট উপজেলার পরানপুর গ্রামের আড়ৎদার শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘জুনের প্রথম সপ্তাহের পরে আমের বাজার জমবে। করোনা আতঙ্কের কারনে আম ব্যবসায়ীরা তেমনভাবে আম কেনা শুরু করেনি। যেহেতু কয়েকদিনের মধ্যে স্বল্প পরিসরে গাড়ি ও ট্রেন চলবে,তাতে আমের বাজারও একটু জমবে। একই কথা জানালেন আরো কয়েকটি আড়ৎদার। ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের বাঁকড়া বাজারের আমের আড়ৎদার বাচ্চু আলী বললেন, ‘আমার আড়তে দুজন ব্যাপার এসেছেন। তাঁরা গোপালভোগ আম চাইছেন। কয়েকজন বাগানওয়ালাকে বলেছি, আগামী সপ্তাহে আম নিয়ে আসবে। আগামী সপ্তাহে বাজারে গোপালভোগ আম পাওয়া যাবে। চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনজুর রহমান বলেন, এবার আম ঠিকমতো রোদ পায়নি। এ জন্য আম পাকতে এক সপ্তাহ দেরি হচ্ছে। গাছে মুকুলও এসেছিল একটু দেরিতে। তবে সপ্তাহ খানেক সময়ের মধ্যে আম বাজারে আসবে।

সুত্রঃ রাজশাহী সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *