” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-২৭# বিষয়ঃ আমদানি নির্ভরতা কমাতে দরকার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণ” কৃষি অন্বেষণ”পর্ব-২৭# বিষয়ঃ আমদানি নির্ভরতা কমাতে দরকার গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণ

কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম

পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি ও মসলা ফসল। অন্যদিকে এটি একটি অন্যতম অর্থকারী ফসলে হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
© দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ৩৫ লাখ মেট্রিক টন সে তুলনায় উৎপাদন প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। প্রতি বছর ঘাটতির প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করতে হয়। কিন্তু এই ঘাটতি মোকাবেলা শুধুমাত্র শীতকালীন পেয়াজ দিয়ে মিটানো সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন গ্রীষ্মকালীন পেয়াজের জাতের সম্প্রসারণ। আর সেই লক্ষ্যেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পেঁয়াজের ঘাটতি মোকাবেলা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ সম্প্রসারণের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে কৃষক প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী বাস্তবায়ন, প্রণোদনাসহ বিভিন্ন উদ্বুদ্ধকরণ প্রোগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।
তাই, আজকের পর্ব গ্রীষ্মকালীন পেয়াজ চাষের আবাদ কলাকৌশল ও সম্প্রসারণে চ্যালেঞ্জ বিষয়গুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাতঃ
====================
স্বল্পজীবি এবং গাঢ় লাল রঙ্গের গ্রীষ্মকালীন জাতের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে বারি পেঁয়াজ-৫ জাতটি সবচেয়ে ভালো, এছাড়াও বারি পেঁয়াজ-২, বারি পেঁয়াজ-৩ গ্রীষ্মকালীন জাত।
বীজ বপনের সময়ঃ
=============
আগাম ও নাবী এই দুই সময়ে বীজ লাগানো যায়। ফেব্রুয়ারী- মার্চে বীজ বপন করে ৪০-৪৫ দিনের চারা মার্চ- এপ্রিল মাসে এবং জুন-জুলাই মাসে বপন করে আগষ্ট- সেপ্টেম্বর মাসে ৪৫ দিনের চারা লাগাতে হবে।
বীজ শোধনঃ
========
এক কেজি বীজে ২-৩ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা থিরাম বা ইপ্রিডিয়ন গ্রুপের ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
বীজতলা তৈরীঃ
===========
চারা উৎপাদনের কাজটি অনেক গুরুত্ব দিয়ে এবং দক্ষতার সাথে করতে হবে। ভালো মানের চারা উৎপাদন হলো গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের মূল চেলেন্জ।
© ৫০% শেড নেট বা পলি টানেলের ভিতর মাটি মিহি করে শোধনের পর ৩ x ১ মিটার বেড তৈরী করে ২৫-৩০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে।
বীজ হারঃ শতক প্রতি ৬০০-৭০০ গ্রাম
=======
জমি তৈরিঃ
========
BBF(Broad Based Farrow) পদ্ধতিতে অর্থাৎ সমতল মাটি হতে ৬ ইঞ্চি উঁচু করে বেড বানাতে হবে। এতে ছত্রাক জনিত রোগ কম। ড্রিপ ইরিগেশন বা স্প্রিং কুলার পদ্ধতিতে সেচ প্রয়োগ করলে ৪০-৫০% পানি কম লাগে ।
সার প্রয়োগঃ
=========
বিঘা প্রতি ইউরিয়া ৩৩-৩৫ কেজি, টিএসপি ২৮-৩০ কেজি, এমওপি ২৫-২৬ কেজি, জিপসাম ২৩-২৪ কেজি, গোবর সার ৫৫০-৬৭৫ কেজি এবং মুরগির বিষ্ঠা ৩০০-৪১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়।
© ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া বাকি সকল সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের সাথে দিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার সমান ০৩ কিস্তিতে ভাগ করে চারা রোপণের ১৫, ২৫-৩৫ এবং ৪৫-৫৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
© এমওপি সার ০২ ভাগে ভাগ করে চারা রোপণের ১৫ দিন পর ০১ম কিস্তি এবং ৪৫-৫৫ দিন পর ২য় কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণঃ
=========
সারি থেকে সারি ৮ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪ ইঞ্চি অনুসরণ করে ৪০-৪৫ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। লাগানোর পর পরই সেচ দিতে হবে।
পোকামাকড় এবং রোগবালাই দমনঃ
=========================
থ্রিপস পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক ০.৫ মিলি/লিটার এবং পার্পল ব্লোচ রোগ দমনে জন্য ইপ্রিডিয়ন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম/লিটার হারে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
সংগ্রহ কালঃ
========
আগাম আবাদ করলে ৬৫-৭৫ দিন এবং নাবীতে করলে ৯০-১০০ দিনে পেয়াজ সংগ্রহ করা যায়। তবে পেয়াজের ফুল আসলে ভেংগে দিতে হবে, না হলে কন্দের ফলন কমে যাবে।
ফলনঃ হেক্টর প্রতি ১৫-২২ টন ফলন পাওয়া যায়।
=====
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের সমস্যাঃ
========================
১। বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল (বছরে প্রায় ৬০০-৭০০ কেজি)।
২। বীজতলায় চারা উৎপাদন অনেক জটিল এবং প্রযুক্তি নির্ভর।
৩। অত্যধিক তাপমাত্রা এবং বর্ষায় চারার মৃত্যুহার অনেক বেশি।
৪। বর্ষাকালে পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের উপদ্রব বেশি।
৫। ফসল কর্তনের পর কিউরিং এবং শুকানো জটিল।
৬। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
৭। ফসল কর্তনের পর ২-৩ মাসের বেশি সংরক্ষনে করা যায় না। তাই অবশ্যই এই সময়ের মধ্যে পেয়াজ বিক্রি করে দিতে হবে।
৮। উঁচু জমির স্বল্পতা। বন্যায় সম্পূর্ন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
® ” কৃষি অন্বেষণ” কৃষি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের একটা উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানকার যে কোন লিখার ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ সাদরে গ্রহনীয়৷

যোগাযোগ————-
কৃষিবিদ কামরুল ইসলাম
৩৫ তম বিসিএস কৃষি
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার
বাঘা, রাজশাহী

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *